সাকিব হোসেন,কুষ্টিয়া কুমারখালী প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন (৩৫) ও তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে জমি দখল, হামলা, ভাঙচুর, মিথ্যা মামলায় আসামি করে হয়রানি ও জেল হাজতে প্রেরণের অভিযোগ উঠেছে। তিনি কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কসবা গ্রামের জমারত হোসেনের ছেলে। এতে তটস্থ কসবা গ্রামবাসী।
গ্রামবাসীর ভাষ্য, বাবুলের শ্যালিকা লাবনী আক্তার সহকারী জজ হিসেবে কর্মকর্ত। শ্যালিকার ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাবুল এলাকায় বাহিনী গড়ে তুলেছে। বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে মানুষের মাঝে অশান্তি সৃষ্টি করছে। সংঘর্ষ তৈরি করে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করছে। শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধিসহ নানান শ্রেণি পেশার মানুষের নামে হয়রানিমূলক মামলা করছে। মামলায় কেউ আবার জেল হাজতে রয়েছে। তারা শ্যালিকা ও দুলাভাইয়ের অত্যাচার থেকে রেহায় পেতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছেন।
জানা গেছে, কসবা গ্রামের রুজদার আলীর মেয়ে মোছা. লাবনী খাতুন প্রায় দুই বছর আগে সহকারী জজ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি বর্তমানে যশোর ঝিকরগাছা আদালতে কর্মরত রয়েছেন। লাবনী সহকারী জজ হওয়ার পরে তাঁর দুলাভাই বাবুল হোসেন এলাকায় প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। গড়ে তোলেন একটি বাহিনী। তারা বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে অশান্তি ও সংঘর্ষ সৃষ্টি করে ঘড়বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। জজের সুপারিশে পুলিশ দিয়ে নানান হয়রানি ও মামলায় মানুষকে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
আরো জানা গেছে, প্রায় ১৬ বছর ধরে কসবা জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক পদে দাঁয়িত্ব পালন করেন গ্রামের মৃত শিতলের ছেলে ও বাবুলের সমর্থক জামাল উদ্দিন (৫০)। তাঁর বিরুদ্ধে মসজিদের অর্থ ছয়নয়ের অভিযোগ তোলেন গ্রামবাসী। সেজন্য প্রায় তিনমাস পূর্বে তাকে বাদ দিয়ে মৃত আতাহার আলীর ছেলে মো. হাবিলকে সাধারণ সম্পাদক বানানো হয়। তারা সম্পর্কে চাচাতো চাচা – ভাতিজা। এনিয়ে গ্রামে দুটি পক্ষের সৃষ্টি হয়। তাদের মধ্যে চলছিল বিরোধ। বিরোধের জেরে ১৭ আগষ্ট সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ নিয়ে থেমে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে গ্রামের অন্তত ১৬ জন আহত হন। ১০ থেকে ১২ টি বাড়িতে ভাঙচুর লুটপাট করা হয়। ওইদিন রাতে সহকারী জজের মা রুপালী খাতুন ১৫ জনের নাম মামলা করেন। গেল দুই বছরে ওই সহকারী জজের সুপারিশে থানা ও আদালতে অন্তত ১০ টি মামলা হয়েছে।
এদিকে এলাকায় শান্তি রক্ষার্থে সহকারী জজ লাবনী আক্তারের বরখাস্ত ও দুলাভাই বাবুল ও তাঁর সহযোগীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন এলাকাবাসী। গত রোববার দুপুরে কসবা জামে মসজিদের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে নানান শ্রেণি পেশার মানুষ মানববন্ধন করেন।
গত রোববার সরেজমিন গেলে, শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বর ও কসবা গ্রামের বাসিন্দা আবু জাফর সমকালকে জানান, আট বছর আগে তিনি লাবনীর ফুফুদের কাছ থেকে সাড়ে আট শতাংশ জমি কিনেছিলেন। তবে লাবনী জজ হওয়ার পরে ক্ষমতার দাপটে তা দখল করে নিয়েছে। আদালতে মামলা চলছে।
গ্রামের গৃহিণী ইসমাতারা খাতুন সমকালকে জানান, ১৭ আগষ্ট গ্রামে মসজিদ কমিটি নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্ব হয়। দ্বন্দ্বে বেশকিছু ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করেন বাবুল বাহিনী। অনেকেই আহত আছেন। কিন্তু জজ লাবনী প্রভাব দেখিয়ে তার মাকে দিয়ে আমার ছেলেসহ অনেকের নামে মামলা করেছেন। সেই মামলায় আমার কলেজ পড়ুয়া ছেলে এখন জেলে আছে। আমি জজের বিচার চাই।
কৃষক জামাত আলী জানান, ১৫ বছর ধরে জজ লাবনীর দুলাভাই বাবুল ও তার সহযোগী জামাল মসজিদের দাঁয়িত্ব পালন করে লুটেপুটে খেয়েছে। কিছু বলতে গেলেই লাবনী বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে হয়রানি করেন। গ্রামবাসী জজ লাবনীর অত্যাচার থেকে মুক্তি চাই।
গৃহিনী তাসলিমা খাতুন জানান, ক্ষমতার অব্যবহার করে সহকারী জজ লাবনী এলাকায় অশান্তি করছে। মানুষের নাম মিথ্যা মামলা করছে। তিনি এসবের সুষ্ঠ বিচার চান।
নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন ছাত্র দাবি করে ডলি খাতুন সমকালকে জানান, লাবনী জজ হওয়ার পর থেকেই বাবুল এলাকায় দাপট দেখিয়ে আসছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে মানুষকে নানামুখী হয়রানি করছে। তিনি জজ লাবনী ও স্বজনদের উপযুক্ত শাস্তি চান।
তবে এলাকাবাসীর সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লাবনীর মা রুপালী খাতুন, বাবা রুজদার আলী ও দুলাভাই বাবুল হোসেন। তারা সমকালকে জানান, গ্রামবাসী লাবনীর চাকুরিতে হিংসা করে শত্রুতামূলক ও মিথ্যা দোষারোপ করছেন। সম্প্রতি মসজিদ কমিটি নিয়ে দু’পক্ষের দ্বন্দে তাঁদের বাড়িতেও হামলা ভাঙচুর করা হয়েছে। এঘটনায় তারা থানায় একটি মামলা করেছেন।
পুলিশ দিয়ে কখনও ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি বলে মুঠোফোনে সমকালকে জানিয়েছেন যশোর ঝিকরগাছার সহকারী জজ মোছা. লাবনী আক্তার। তিনি জানান, তিনি বা তার স্বজনরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। সামাজিক দ্বন্দ্বে তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। সম্প্রতি মসজিদ কমিটির দ্বন্দ্ব নিয়ে তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর ও দুলাভাইকে মারপিট করা হয়েছে। তিনি পুলিশ দিয়ে কোনোদিনও ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি।
কুমারখালী থানার ওসি মো. আকিবুল ইসলাম জানান, জজ লাবনী গ্রামের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে তাকে ফোন দিতেন। ১৭ আগষ্ট জজ ম্যাডামের মা বাদী হয়ে ১৫ জনের নামে মামলা করেছেন।