গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি–সদর ইউনিয়নের একমাত্র সংযোগ সেতুটি ভেঙে পড়ায় দুই ইউনিয়নের সরাসরি যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিদিন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, চাকরিজীবী, দিনমজুরসহ পাঁচ শতাধিক মানুষ এখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডিঙি নৌকায় খাল পার হতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন স্কুল–কলেজগামী শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। বারবার সংস্কারের দাবি জানানো হলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। প্রায় এক মাস আগে সেতুর মাঝ বরাবর ফাটল দেখা দেয়। এরপরও মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছিলেন। অবশেষে সপ্তাহখানেক আগে সেতুটির পূর্বাংশ সম্পূর্ণ ধসে খালে পড়ে যায়।
পানপট্টি ইউনিয়নের জয়মানিক গ্রামের বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, “২০০৮ সালে এলজিইডি বোয়ালিয়া খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করে। দুই ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের মূল ভরসা ছিল এটি। ভেঙে পড়ায় এখন ছোট নৌকার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।”
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ডিঙি নৌকার মাধ্যমে যাতায়াতে জনপ্রতি ৫–১০ টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। সরু নৌকায় একসঙ্গে ২–৩ জনের বেশি ওঠা সম্ভব নয়। নৌকা দুলে উঠলে আতঙ্কে অনেকেই যাতায়াত করতে সাহস পান না। বিশেষ করে শিশুসহ নারীদের জন্য এটি বড় ঝুঁকি।
জয়মানিক গ্রামের মানসুরা বেগম বলেন, “প্রতিদিন বাজারে যেতে হয়। এখন নৌকায় উঠতে গেলেই ভয় লাগে, পোলাপান নিয়ে তো আরও কষ্ট।”
রিকশাচালক আলী আকবর অভিযোগ করেন, “সেতুর ভাঙা স্থানে কোনো সতর্কতা চিহ্ন নেই। ভুলবশত কেউ সেতুর ওপর উঠলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
ব্রিজবাজারের ব্যবসায়ী মতি লাল চন্দ্র শীল বলেন, “পানপট্টির কাস্টমাররা আর আসতে পারে না। ছোট নৌকা দিয়ে অনেকেই পারাপার হতে ভয় পাচ্ছে। তাই দ্রুত নতুন সেতু নির্মাণ জরুরি।”
পশ্চিম পানপট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন বলেন, “শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বড় বিপদ। অপেক্ষা করতে হয়, নৌকা ছোট—যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ভাঙা সেতুটি পরিদর্শন করা হয়েছে। বিকল্প চলাচলের জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ চলছে। পাশাপাশি একটি নতুন আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহামুদুল হাসান বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদ ও এলজিইডি যৌথভাবে দ্রুত একটি কাঠের সেতু নির্মাণে কাজ করছে। একই সঙ্গে স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাবও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।”
মন্তব্য করুন