গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ
বরিশাল বিভাগের দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান শস্যভাণ্ডার গলাচিপায় চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম জমিতে আমন চাষ হলেও উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। উপজেলা কৃষি দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, মৌসুম শেষে গলাচিপায় প্রায় ৬০০ কোটি টাকার আমন ধান বিক্রি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এবছর বর্ষণের আধিক্য, বীজ পচে যাওয়া, জোয়ারের পানিতে বীজতলা প্লাবিত হওয়াসহ নানা প্রতিকূলতায় শুরুতে কৃষকেরা বিপাকে পড়েন। অনেক জায়গায় বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের অতিরিক্ত বীজ সংগ্রহে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এরপরও ধীরে ধীরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শেষ পর্যন্ত রোপা আমনের চাষাবাদ ঘুরে দাঁড়ায়। গলাচিপা উপজেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে। বাস্তবে চাষ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে। তবে চাষ কম হলেও উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় কৃষকেরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আকরামুজ্জামান বলেন, গলাচিপার অনেক কৃষক এখন তরমুজ চাষে আগ্রহী হওয়ায় আমনের চাষ কিছুটা কমেছে। আগাম তরমুজের জন্য জমি প্রস্তুত করতে তারা ধান কম লাগাচ্ছেন। তবে কম জমিতে হলেও উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পানপট্টি ইউনিয়নের কৃষক চান মিয়া জানান, তিনি সাড়ে চার একর জমিতে ধান চাষ করেছেন। বর্তমানে প্রতি মণ ধান ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদন খরচ বেশি হলেও ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ছাড়া ধান ঘরে তুলতে পারার আনন্দই তাঁর কাছে বড়।
এদিকে বাজারে আগাম জাতের গিরমি ও মালা ধান উঠতে শুরু করায় সরবরাহ বেড়ে গেছে। এতে বাজারে ধানের দরপতন ঘটেছে। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি মণে প্রায় ১০০ টাকা কম দামে ধান বিক্রি হচ্ছে। গলাচিপার ধানের আড়ত মালিক জহিরুল ইসলাম জানান, গত বছরের এসময় প্রতি সপ্তাহে দুই-আড়াই লাখ মণ ধান বিক্রি হলেও এবার হচ্ছে দেড় লাখ মণ। বেশি ফলন হওয়ায় বাজারে ধানের চাপ বেড়েছে, ফলে দাম কমেছে।
উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা আকরামুজ্জামান জানান, বাম্পার ফলন হলেও কম দামের কারণে উপজেলার প্রায় ৪৮ হাজার কৃষক পরিবার লোকসানের মুখে পড়তে পারে। তবে সমন্বিত চাষাবাদ ও বিকল্প ফসলের মাধ্যমে কৃষকেরা এই লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মন্তব্য করুন