মো: রাজিব হোসেন স্টাফ রিপোর্টার:
মৃৎশিল্পসহ আচার-বড়ি-হজমিগুলি-পাঁপড় থেকে হাতের কাজের নানা সম্ভারে রঙিন হয়ে উঠেছে প্রতিটি মন্ডপ কেন্দ্রিক মেলা প্রাঙ্গন। ঘর-গেরস্থালির ব্যবহারের জিনিসের পাশাপাশি শঙ্খ, শাঁখা, পুজোর নানা উপকরণও আছে।
কার্টুনের চরিত্রগুলো হাওয়ায় ভাসছে। শিশুদের কেউ কেউ সেগুলো বুকে জড়িয়ে হাঁটছে। চারপাশে হরেক রকম পণ্যের স্টল। লোকের ভিড়ভাট্টায় দাঁড়ানোই মুশকিল। তবু সবার উঁকিঝুঁকি দিয়ে একটু দেখার চেষ্টা মেলায় কী কী পাওয়া যাচ্ছে। দুর্গাপূজায় বাড়তি আনন্দ দেয় এই মেলা।
(২৫ অক্টোবার রোজ বুধবার) সকাল থেকে মাগুরা জেলার বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দেখা যায়, দেবীদর্শনের পাশাপাশি ভক্তেরা ভিড় জমাচ্ছেন মেলাতেও।
শত্রুজিৎপুরের পূজার মেলায় নাগরদোলা, চরকিসহ রয়েছে বিনোদনের বিভিন্ন ব্যবস্থা। খাজা-গজাসহ রকমারি খাবার তো আছেই। পাশেই আছে নবগঙ্গনদী অনেকেই নদীর পাড়ে বসে সমায় কাটাচ্ছে।
আড্ডায় মেতে উঠেছেন। অনিরুদ্ধ তার মায়ের আঁচল ধরে টানছে। নাগরদোলায় চড়বে। কিন্তু মা চাইছেন প্রতিমা দেখা শেষ করে ওকে চড়াবেন। অনিরুদ্ধ তার দাবিতে অটল। অবশেষে ছেলের জেদের কাছে মা হার মানলেন। নাগরদোলায় চড়ে অনিরুদ্ধ আনন্দে আটখানা। বলল, ‘এখানে চড়তে খুব মজা।’ নাগরদোলায় সামনে তখন লম্বা লাইন।
সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়াও অনেকে ঘুরতে এসেছেন মেলায়। বন্ধুদের নিয়ে এসেছেন হাসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই আসি। বৈশাখ আর পূজা ছাড়া এমন আমেজ তো পাওয়া যায় না।’
মাগুরা নতুন বাজারের মেলায় ভিড় তুলনামূলক বেশি। প্রবেশদ্বার থেকে পুরো সড়কের দুই ধারে বাহারি পণ্যের স্টল। মন্ডা-মিঠাই, নিমকি, লাড্ডুসহ নানা রকম মিষ্টিজাতীয় খাবার সড়কের শুরুতে সাজানো। এক দোকানি বলেন, পূজা উপলক্ষে তাঁরা এগুলো নিজেরা বানিয়ে আনেন। তবে এবারের বেচা-বিক্রি নিয়ে তাঁরা তেমন সন্তুষ্ট নন।
ঘর সাজানোর পণ্য থেকে কাপড়, সাজসজ্জা, খাবার—সবই পাওয়া যাচ্ছে মেলায়। কিছু কিছু স্টলে চলছে বিভিন্ন নতুন বাজারে অনেকগুলো পূজামণ্ডপে পূজা হচ্ছে। সরু রাস্তায় চলতে হয় লাইন ধরে। হাঁটতে গেলে হঠাৎ দেখা যায়, মাটিতে নানা রকম সবজি আর ফলের সমারোহ। একটু এগিয়ে দেখা গেল, এক শিশু একটি ঝুড়ির মধ্যে রসুন, কাঁচা মরিচ, পটোল, লেবু, আতা, কমলা আর ছোট্ট কিছু পাখি নিয়ে পসরা সাজিয়েছে। তবে এগুলো মাটির তৈরি। মাটির এই খেলাগুলোর
প্রতি আগ্রহ অনেকেরই। মিনতি রানি সাহা দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। তিনি বলেন, এই জিনিস সব সময় পাওয়া যায় না। দেখতে ভালো লাগে। ছোটবেলার মেলার কথা মনে পড়ে।
মাগুরা নতুন বাজারের এই পূজার মেলা বসে ৪৫ বছর ধরে। প্রতিদ্বন্দ্বী পূজা কমিটি এ মেলার অন্যতম এক আয়োজক। এ কমিটির সেক্রেটারি বলেন, ‘এই মেলা আমাদের উৎসবের আমেজ আরও বাড়িয়ে দেয়।’ আজ মঙ্গলবার বিজয়া দশমী। দেবী দুর্গা বিদায় নেবেন। মেলাও ভাঙবে। আবার আগামী বছর দেবীর আগমনের মধ্য দিয়ে মণ্ডপের আশপাশে বসবে মেলা।