
আর্জেন্টিনা আজ বিষাদের আবরণে ঢেকে গেছে। লিওনেল মেসিকে স্পেনের হাতছানি থেকে বাঁচিয়ে জাতীয় দলে টেনে আনার যে মানুষটি ছিলেন প্রধান কারিগর— সেই ওমর সাউতো আর এই পৃথিবীতে নেই। জাতীয় দলের দীর্ঘদিনের এই নিবেদিত ম্যানেজার ৭৩ বছর বয়সে শেষ শ্বাস ত্যাগ করেছেন। আড়াই দশকেরও বেশি সময় এএফএর অন্দরমহলে নিরলস কাজ করে যাওয়া এই অব্যক্ত নায়ককে হারিয়ে শোকাহত পুরো ফুটবল অঙ্গন।
তার মৃত্যুর পর আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) গভীর শোকবার্তা জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয় “অসীম বেদনার সঙ্গে জানাচ্ছি— ওমর সাউতো আর আমাদের মাঝে নেই। আর্জেন্টাইন ফুটবলে তাঁর ভালোবাসা, ত্যাগ আর নিষ্ঠা আমাদের চিরদিনের সম্পদ হয়ে থাকবে।”
এএফএ সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া আবেগভরা ভাষায় লেখেন “বেদনাদায়ক খবর। তুমি চলে গেলে, পাপুয়া। জাতীয় দলের প্রতি তোমার অবদান ভাষায় ধরা যায় না। আজ আকাশও যেন নীল-সাদা স্মৃতিতে ভেজা। তুমি সবসময় আমাদের সঙ্গেই থাকবে।”
২০০০–এর দশকের শুরুর দিকে বার্সেলোনার এক কিশোরকে নিয়ে তখনো বিশেষ কোনো আলোচনা ছিল না। কিন্তু বয়সভিত্তিক একটি দলে দায়িত্ব পালন করা এক স্প্যানিশ কোচের মন্তব্য— ‘ওই বালক অন্য সবার চেয়ে আলাদা’— সাউতোর মনে আলো জ্বালিয়ে দেয়।
সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর কঠিন অনুসন্ধান। রোসারিও শহরের টেলিফোন ডিরেক্টরি ঘেঁটে মেসি পরিবারকে খুঁজে বের করা, আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ, এবং ধাপে ধাপে মেসির বাবার কাছে পৌঁছে যাওয়া— সবই করেছিলেন সাউতো নিজে। আর তখনই মেসির বাবা বলেছিলেন “অবশেষে! আমার ছেলে সবসময়ই আর্জেন্টিনার হয়েই খেলতে চেয়েছে।”
স্পেনের ডাক এড়াতে জরুরি কৌশল
স্পেন যখন মেসিকে তাদের অনূর্ধ্ব–১৭ দলে টানতে চাইছিল, তখন সাউতো ও কোচ তোকাল্লি নেন দ্রুত সিদ্ধান্ত। প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ আয়োজন করে সেই ম্যাচেই প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনার জার্সিতে মাঠে নামানো হয় মেসিকে। এই ম্যাচই তাঁর জাতীয় দলের যাত্রার সূচনা— যা আজ ইতিহাসের অমর অধ্যায়।
সাউতো বলতেন “মেসি কখনো স্পেনকে বেছে নিতে চাইত না। তার রক্তে সবসময় ছিল আর্জেন্টিনা।”
গত অক্টোবরে এএফএ তাদের বার্ষিক সভায় ওমর সাউতোকে বিশেষভাবে সম্মান জানায়। দীর্ঘ তিন দশক আর্জেন্টাইন ফুটবলের ভিত শক্ত করে রাখা এই মানুষটির প্রয়াণে আজ দেশজুড়ে শোকের স্রোত।
মেসির ক্যারিয়ার, আর্জেন্টিনার সাফল্য আর বিশ্ব ফুটবলের মানচিত্র— সব জায়গাতেই চিরদিন লেখা থাকবে তাঁর অবদান।
ওমর সাউতো— আলোচনার আড়ালে থাকা সেই উজ্জ্বল মানুষ, যার নিরলস শ্রমে গড়ে উঠেছে আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসের এক বিশাল অধ্যায়।
মন্তব্য করুন