মোঃ রায়হান, রাঙ্গাবালী,পটুয়াখালী (প্রতিনিধি)
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের ফুলখালী গ্রামের উত্তর-পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত সরকারি কৈয়ার খাল (স্থানীয়দের দেয়া নাম) দখল করে মাছ চাষের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকজন দীর্ঘদিন যাবত এ কাজ করছেন। খালের বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ দেওয়ায় এখন খালটি মৃতপ্রায়।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতারা বাৎসরিক চাঁদার বিনিময়ে মাছ ধরার অনুমতি দেন নির্দিষ্ট কিছু লোকজনদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,খালটিতে বাঁধ দেওয়ায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। খালের আশপাশের প্রায় জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকে। জানা গেছে, খালটির আয়তন ৭-৮ একর। খালের মূল শাখা ও উপশাখা (নালা) দখল করে অবৈধ বাঁধ দেওয়ায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এক সময়ের খরস্রোতা কৈয়ার খালটি নাব্য সংকটে পড়েছে। হারিয়ে যাচ্ছে খালের প্রকৃত রূপ। দ্রুত এসব অবৈধ দখলদারদের উৎখাতের দাবি এলাকাবাসীর।
ফুলখালী গ্রামের পশ্চিম প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে খালটি পাশের গ্রাম চতলাখালী দিয়ে বাহেরচর-গহিনখালী খালের সঙ্গে মিশেছে। খালটি প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে দুই কিলোমিটার অংশে অন্তত ২০টি জায়গায় বাঁশের গড়া (বেড়া) দিয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। খালে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে নানা প্রজাতির মাছ চাষ করাসহ যে যার মত করে বালু ভরাট করে উঠিয়েছে ঘরবাড়ি।
এমনকি বাদ যায়নি সরকারীভাবে নির্মানকৃত কালভার্ট ও বালু ভরাট করে কালভার্টের সম্মুখে নির্মান করা হয়েছে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্লট।
ফলে বিকল হয়ে গেছে কালভার্টটি যার ফলশ্রুতিতে ব্যাহত হচ্ছে জমির পানি নিষ্কাশন প্রক্রিয়া।
অভিযুক্তরা হলেন , ৯৯ খতিয়ানে – মতলেব গাজী,মস্তফা গাজী,মহিব্বুল্লাহ ফরাজী,মাসুম ফরাজী,নুরু হাওলাদার,রনি হাওলাদার,,ফারুক মিয়া,কামাল হাওলাদার ,দুধা গাজী, এবং দক্ষিণ পাশের শাহজালাল মাওলানা,শহিদ শিকদার,জাফর দালাল,আব্বাস ফকির,আনিস হাওলাদার,ফেরদৌস হাং,নাইম হাওলাদার
খতিয়ান ২ – জোনাব আলী খা,কালু খা,দুদা হাওলাদার,জামাল হাওলাদার,নাইম হাং,সিদ্দিক গাজী,তাহের মিয়া,বশির মিয়া, ইউসুফ মিয়া ,ফারুক মিয়া,মহসিন,মোয়াজ্জেম মিয়া, সহ আরো অনেকে।
ফুলখালী গ্রামের ইউসুফ মল্লিক বলেন, এখানে দুইটি খাল রয়েছে দুটোই সরকারী খাল, এখানের স্থানীয় লোকজন দখল করে রেখেছেন । খালের মাঝখান দিয়ে বাধ উঠিয়ে নির্মান করেছেন বড় বড় ঘের ও পুকুর। খালটি দখল হওয়াতে আমার প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে বীজতলা পচে যাচ্ছে অন্য ফসল ও ঠিক ভাবে ঘরে তুলতে পাড়ছিনা, এছাড়াও পানি নিষ্কাশনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে যার ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন সাধারন মানুষ সহ শতশত কৃষক । প্রশাসন যদি খাল দুটি এখনি উদ্ধার না করেন অচিরেই এ খাল দুটি সম্পূর্ণভাবে দখল হয়ে যাবে,সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি শত শত কৃষকের কথা মাথায় রেখে খালটি যেন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
স্থানীয় কৃষক জামাল হাওলাদার বলেন,খালটি সম্পূর্ণ সরকারী খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত এক সময় এটা বড় একটি খাল ছিল খালটি দখল করে মাছের ঘের ও পুকুর এবং অবৈধ ভাবে ঘর বাড়ি তৈরী করায় এখন পানি নিষ্কাশন হচ্ছেনা । যার কারনে আমাদের চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে, এখানে প্রতি বছরই ফসল নস্ট হয়ে যাচ্ছে বর্ষাকালে ফসল তলিয়ে থাকে ২-৩ বার ধানের বীজ করতে হচ্ছে,এছাড়া ও এখানে মৌসুমী তরমুজ চাষাবাদ হত এখন আর হয়না কারন তখন পানির খুব দরকার হয় কিন্তু খালটি দখল হওয়াতে কেউ পানি দিতে চায়না যার কারনে তরমুজ চাষিরা এখানে চাষাবাদ করেনা, সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি খালটি যেন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত মহিবুল্লাহ ফরাজী স্বীকার করেন তিনি অনেকদিন যাবত সরকারী খাল
অবৈধ ভাবে দখল করে আছেন , তিনি আরো বলেন খালটি আমি ছাড়াও ২০/২২ জন দখল করে আছে।
এছাড়াও অভিযুক্ত নাইম হাওলাদার বলেন,
এখানে সরকারি খাল দখলে আমরা নিজেরা নিজেরাই আছি যদি সকল কৃষকের কথা চিন্তা করে সরকার যদি খালটি কেটে দেয় তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই এতে সবার জন্য ভাল হবে বলে মনে করি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন,অবৈধ ভাবে খাল দুটি দখল হয়ে যাওয়ার কারনে পানি প্রবাহ বন্ধ রয়েছে এর কারনে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে কৃষক, ইউএনও মহোদয়ের কাছে কৃষকরা লিখিত ভাবে অভিযোগ দিলে আশা করছি খুব শীঘ্রই খাল দুটি দখল মুক্ত করে দেয়া সম্ভব হবে।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, রাঙ্গাবালী যেহেতু কৃষি নির্ভর একটি এলাকা, খালে বাধ দেওয়ার কারনে কৃষকের কোনো ক্ষতি হোক এটা আমরা চাই না৷ সব ধরনের খাল আমি উচ্ছেদ করে দিবো, বাঁধ দিয়ে খালে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। আমরা রাঙ্গাবালীতে ইতোমধ্যে বেশ কিছু সরকারী খাল অবমুক্ত করেছি। বলেন উপজেলার কোথাও প্রাকৃতিক খালে বাঁধ নির্মান করতে দিবো না৷
“প্রভাবশালী মহল চাঁদা নিয়ে মাছ ধরার অনুমতি দেয় নির্দিষ্ট কিছু লোকজনকে”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- খালটি ইজারা দেয়া হয়নি। প্রভাবশালী মহল চাঁদা নিয়ে মাছ ধরতে দিবে এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।