সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সাভারের আশুলিয়া জামগড়া এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে ঘটিত নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে যা এলাকাবাসীর ভিতির অত্যন্ত উদ্বেগজনক। হত্যা হবার বেশ কয়েকদিন পরে লাশ বেহালা অবস্থায় থাকার পরে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রাদেশিক ভাড়াটি বাসিন্দাদের সাথে যোগাযোগ করে ঘটনা জেনে অবগত হন। পরবর্তীতে, উক্ত ফ্ল্যাটের ৪র্থ তলা থেকে স্বামী, স্ত্রী ও তাদের ১২ বছরের সন্তানের অর্ধগলিত গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনায়, ভিকটিমের ভাই মামলা দায়ের করেন এবং এটি আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করেন যার মামলা নম্বর নং-০৪/৭১৬,তারিখ ০১ অক্টোবর ২০২৩।
এই ঘটনার পরিণামে, সাভারের এই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়ে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় এটি প্রচারিত হয়। র্যাব উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য গোয়েন্দা নজদারী বৃদ্ধি করে।
গত রাতে, র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-০৪ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুরের শফিপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত হত্যাকান্ডের মূল হোতা মোঃ সাগর আলী (৩০) পিতাঃ মোবারক মোগবর আলী, টাংগাইল এবং তার অন্যতম সহযোগী (স্ত্রী) এবং ঈশিতা বেগম (২৬), স্বামীঃ মোঃ সাগর আলী, দেওয়ানগঞ্জ, জামালপুর, কে গ্রেফতার করে র্যাব। উক্ত হত্যাকান্ডের সময় ভিকটিম মোক্তার হতে লুটকৃত আংটি উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে গ্রেফতারকৃতরা এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছেন।
গ্রেফতারকৃতরা প্রথমে অর্থের লোভে ও পরবর্তীতে কাঙ্ক্ষিত অর্থ না পেয়ে ক্ষোভ থেকে উক্ত হত্যাকান্ডটি সংঘটিত করে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ গ্রেফতারকৃত সাগর সাভার বারইপাড়া এলাকার একটা চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় ভিকটিম মোক্তারকে পার্শ্ববর্তী একটি কবিরাজি ও ভেষজ ঔষধের দোকানে তার শারীরিক সমস্যার বিষয়ে চিকিৎসা নিয়ে কথা বলতে দেখে। গ্রেফতারকৃত সাগর জানতে পারে ভিকটিম মোক্তারের ঐ দোকানে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসা বাবদ ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করেও কোন ফলাফল পায়নি এই সুযোগ ধরে গ্রেফতারকৃত সাগর কৌশলে ভিকটিম মোক্তারের সাথে ৯০০০০/- (নব্বই হাজার) টাকার চুক্তি করে। গ্রেফতারকৃত সাগরের সাথে যোগাযোগের জন্য ভিকটিম মোক্তার মোবাইল নাম্বার চাইলে সাগর তার আত্নীয়ের মোবাইল নাম্বার প্রদান করে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত সাগর বাসায় গিয়ে তার স্ত্রীকে উক্ত বিষয়ে জানায় এবং তার স্ত্রী ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ সকালে ঔষধসহ তার বাসায় গিয়ে চিকিৎসা করবে বলে জানায়।
গ্রেফতারকৃত সাগর মাদকাসক্ত ছিল এবং সে বিভিন্ন পেশার আড়ালে চুরি ও ছিনতাই করতেন বলে জানা যায়। জানা যায়, ইতোপূর্বে সে ২০২০ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২০০ টাকার জন্য একই পরিবারের ০৪ জনকে চেতনানাশক ঔষধ খাইয়ে একই কায়দায় গলাকেটে হত্যা করেন। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় সে র্যাব-১২ কর্তৃক গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে সে প্রায় সাড়ে ৩ বছর কারাভোগ করে ২০২৩ সালের জুন মাসে জামিন পেয়ে গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় তার শ্বশুরবাড়িতে (ভাড়া বাসায়) কিছু দিন বাস করে। দীর্ঘদিন জেলহাজতে থাকায় তার আর্থিক অবস্থা ঠিক না থাকার কারণে সে রাজমিস্ত্রি, কৃষি শ্রমিক সহ বিভিন্ন পেশার আড়ালে ঢাকা, সিলেট, ও টাঙ্গাইলে অবস্থান করে এবং সুযোগ পেয়ে চুরি ও ছিনতাই করতেন বলে জানা যায।
গ্রেফতারকৃত সাগর একটি জেলায় বেশকিছু দিন অবস্থানের পর স্থান পরিবর্তন করে অন্য জেলায় যাত্রা করতেন। এছাড়াও, সে অবৈধ পথে পর্যটক দেশে যাওয়ার স্থানীয় সহায়ক পানিতে গমন করে ২০-২৫ দিন অবস্থান করে এবং আগস্ট মাসে দেশে ফিরে এসে কুমিল্লা জেলায় কিছুদিন বসবাস করেন। পরবর্তীতে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় তার শ্বশুরের ভাড়া বাসায় (ভাড়া বাসা) আসেন এবং এই সময়ে গ্রেফতার হন বলে জানা যায।
গ্রেফতারকৃত ঘটনার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।